শত্রু মোকাবেলার উপায় (প্রবন্ধঃ ০১)

পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালার। দরুদ ও সালাম আল্লহর প্রেরিত রসূল (সাঃ) এর প্রতি।

'ক্ষমা করে দেওয়ার অভ্যাস কর, ভাল কাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদের দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নাও (তাদের কথায় ব্যাথিত হয়ে আঘাত করতে যেও না), যদি শয়তানের কোন কুমন্ত্রণা এসে যায় তবে সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর।'
[সূরাঃ আরাফ-১৯৯-২০০]

'আউযুবিল্লাহ' এর মধ্যে রয়েছে বিস্ময়কর উপকার ও মহাত্ম্য। আজেবাজে কথা বলার ফলে মুখে যে অপবিত্রতা আসে তা বিদূরিত হয়। ঠিক তদ্রুপ এর দ্বারা মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা হয় এবং তাঁর ব্যাপক এবং একচ্ছত্র ক্ষমতার কথা স্বীকার করা হয়। আর আধ্যাতিক প্রকাশ্য শত্রুর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্বীয় দূর্বলতা ও অপারগতার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়। কেননা মানুষ শত্রুর মোকাবেলা করা যায়, অনুগ্রহ ও সদ্ব্যবহার দ্বারা তার শত্রুতা দূর করা যায়। যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ঘোষনা করেন,

'নিশ্চই আমার বিশিষ্ট বান্দাদের উপর তোমার (শয়তানের) কর্তৃত্ব চলবে না, আল্লাহর প্রতিনিধিত্বই যথেষ্ট।'
[সূরাঃ বনী-ইসরাইল-৬৫]

যার উপর শয়তান জয়যুক্ত হয় সে ধ্বংস হয়ে যায়। শয়তান মানুষকে দেখতে পায় কিন্তু মানুষ শয়তানকে দেখতে পায় না বলে কুরআনুল কারীমের শিক্ষা হল, 'তোমরা তার (শয়তানের) অনিষ্ট হতে তাঁর (আল্লাহর) কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর যিনি তাকে দেখতে পান কিন্তু সে তাঁকে (আল্লাহকে) দেখতে পায় না।'

মানুষের শত্রুতার সব থেকে ভাল ঔষধ হল প্রতিদানে তাদের সাথে সৎ ব্যাবহার করা। এতে শুধু শত্রুতাই দূর হয় না বরং শত্রু পরম বন্ধুতে পরিণত হবে। আর শয়তানের শত্রুতা হতে নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ তাঁরই নিকট আশ্রয় চাইতে বলেছেন। কেননা এই শয়তানরূপী অপবিত্র শত্রুদেরকে উত্তম ব্যবহার দ্বারাও আয়ত্তে আনা কখনই সম্ভব নয়। কারন সে মানুষের বিনাশ ও ধ্বংসের মধ্যে আমোদ-আনন্দ পায় এবং তাঁর পুরাতন শত্রুতা হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) এর সময় হতেই অব্যাহত রয়েছে।

'আউযুবিল্লাহ' পড়া হল আল্লাহতায়ালার নিকট বিনীত হয়ে প্রার্থনা করা এবং প্রত্যেক অনিষ্টকারীর অনিষ্ট হতে তাঁর নিকট আশ্রয় চাওয়া। 'আউযু' এর অর্থ হল এই যে, 'আমি আল্লাহতায়ালার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি যেন বিতাড়িত শয়তান ইহজগতে ও পরজগতে আমার কোন ক্ষতি করতে না পারে। যে নির্দেশাবলী পালনের জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি তা পালনে যেন আমি বিরত না হয়ে পরি। আবার যা করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে তা যেন আমি করে না ফেলি।'

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মানব রূপী শয়তানের দুষ্কার্য ও অন্যায় হতে নিরাপত্তা লাভ করার যে পন্থা শেখালেন তা হল, 'তাদের সঙ্গে সদাচরণ। কিন্তু জ্বিনরূপী শয়তানের দুষ্কৃতি ও ছলনা হতে রক্ষা পাবার যে উপায় তিনি বলে দিলেন তা হল, আল্লাহরাব্বুল আলামীনেরর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা।

এ সম্পর্কিত কোরআনের বাণীঃ
'অমঙ্গলকে মঙ্গলের দ্বারা প্রতিহত কর, তারা যা কিছু বর্নণা করছে তা আমি খুব ভাল ভাবে জানি। বলতে থাক- হে রব! শয়তানের কুমন্ত্রনা এবং তাদের উপস্থিতি হতে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।'
[সূরাঃ মু'মিনূন-৯৬-৯৮]

(নিজস্ব মতামত বিবর্জিত ও প্রখ্যাত তাফসীর গ্রন্থের সংকলনে)