ইচ্ছা প্রয়োগের স্বাধীনতা (প্রবন্ধঃ ০১)

পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালার। দরুদ ও সালাম আল্লহর প্রেরিত রসূল (সাঃ) এর প্রতি।

'আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির নিকট রসূল পাঠিয়েছি, যাতে করে (তোমাদের কাছে সে বলতে পারে,) তোমরা এক আল্লাহর আনুগত্য কর এবং তাগুতকে (আল্লাহ্‌র বিরুধী শক্তি সমূহকে) বর্জন কর। সে জাতির মধ্যে অতঃপর আল্লাহ কিছু লোককে হেদায়াত দান করেন, আর কতক লোকের উপর গোমরাহী চেপে বসে গেল; অতএব তোমরা জমিনে পরিভ্রমন কর তারপর দেখ, যাহারা সত্যকে মিথ্যা বলিয়াছে তাহাদের কি ভয়াবহ পরিণাম হইয়াছে।'
[সূরাঃ নাহাল-৩৬]

আল্লাহতায়ালা কখনো চান না তাঁর বান্দারা তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করুক এবং তাঁর হালাল করা জিনিসকে হারাম বা হারাম করা জিনিসকে হালাল করুক। এটা যে তিনি চান না, সেটা তিনি তাঁর শরীয়ত ও নবীদের মুখ দিয়ে সুষ্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। রাসূলগনকে তিনি এ কাজেরই দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং তারা এ দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছেন। মহাজ্ঞানী আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালা এটাই ছিল যে, তিনি মানুষকে সৎকাজ ও অসৎ কাজ উভয়টাই করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করবেন। এ দুটির যে কোন একটি বেছে নেয়ার ইচ্ছার স্বাধীনতা তাকে দিবেন এবং তারপর তাকে বিবেক ও বুদ্ধি দান করবেন, যা দ্বারা সে ভাল ও মন্দের যে কোন একটিকে অগ্রাধিকার দিবে। সেই সাথে তিনি বিশ্ব জগতের সর্বত্র ছড়িয়ে দিবেন সত্য ও ন্যায়ের পথের সেই সব নিদর্শন যা মানুষের চোখ, কান, স্নায়ু, মন ও বিবেককে প্রতিটি মূহুর্তে সৎ কাজে উদ্ভুদ্ধ করতে থাকবে, এখানেই শেষ নয়, এরপর তিনি তাঁর বান্দাদের উপর অধিকারতর অনুগ্রহ প্রদর্শন পূর্বক শুধু বিবেকবুদ্ধির উপর নির্ভরশীল না রেখে বিবেক বুদ্ধির জন্য একটা মানদন্ড দিয়েছেন, যা নবীদের মাধ্যমে আগত শরীয়তে চিরস্থায়ী মূলনীতি হিসেবে বিদ্যমান। যখনই বিবেক সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাদন্ধে ভুগবে, তখনই সে ঐ মানদন্ডের কাছ থেকে কোনটা ভুল ও কোনটা ঠিক জেনে নিবে।

আল্লাহতায়ালা তাঁর রাসূলদের বলপ্রয়োগকারী করে পাঠাননি, যে মানুষকে ঘাড় ধরে ঈমানের পথে ঠেলে দিবেন। তাদেরকে পাঠিয়েছেন শুধু মাত্র প্রচারক হিসেবে। একমাত্র আল্লাহ্‌র আনুগত্য করতে এবং আল্লাহতায়ালা ছাড়া আর যত মূর্তি, যত মানব রচিত আইন কানুন, মতবাদ, মনের ঝোঁক, আবেগ ও শক্তি যাই থাকুক, তা প্রত্যাখ্যান করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

(নিজস্ব মতামত বিবর্জিত ও প্রখ্যাত তাফসীর গ্রন্থের সংকলনে)