পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালার। দরুদ ও সালাম আল্লহর প্রেরিত রসূল (সাঃ) এর প্রতি।
'তুমি কি দেখনা তাকে, যে তার কামনা বাসনাকে মা'বূদ রূপে গ্রহন করে? তবুও কি তুমি তার কর্মবিধায়ক হবে? তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশ শুনে ও বুঝে? তারাতো পশুরই মত; বরং তারা আরোও অধম।'
[সূরাঃ আল-ফোরকান-৪৩-৪৪]
এ কথা সুবিধিত যে, মহাম্মাদ (সাঃ) নবুওয়ত লাভের পূর্বে তাঁর জাতির কাছে অতি প্রিয়পাত্র ছিলনে। বংশগতভাবে তিনি তাদের কাছে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। সত্যতার জন্যেও তিনি ছিলেন বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ও 'আল-আমীন' খেতাবে ভূষিত। কিন্তু নবুওয়াত লাভের পর এবং তিনি কুরআন নিয়ে আসার পর তাঁর জাতির লোকেরাই তাঁকে বিদ্রুপ, নিন্দা ও উপহাস করতে লাগল। এটা ছিল আসলে জনসাধারনের উপর রসূল (সাঃ) এর বিরাট ও বিশাল ব্যাক্তিত্বের ও কুরআনের অপ্রতিরোধ্য প্রভাবকে কিছুটা কমানোর লক্ষ্যে তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় নেতাদের তৈরি করা একটা পরিকল্পনা। কারন তারা দেখতে পাচ্ছিল যে কুরআনের বাণীর সামনে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের সকল ভ্রান্ত ধ্যানধারনা ও আকীদা বিশ্বাসের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুক্ষীন হয়ে পরেছে।
এর পর রসূল (সাঃ) সম্বোধন করে তাদের হঠকারিতা, গোয়ার্তুমি ও ঠাট্টা-বিদ্রুপের ব্যাপারে তাঁকে সান্তনা জানানো হয়েছে। কেননা তিনিতো দ্বীন প্রচারের কাজে যুক্তি প্রমাণ পেশ করতে কোন ত্রুটি করেন নাই। রসূল (সাঃ) এর প্রতি তাদের হীন-আচারণ একান্ত ভাবে তাদের নিজস্ব স্বার্থগত চিন্তার কু-ফসল। তারা খেয়াল খুশি ও ভাবাবেগকেই দেবতার আসনে বসিয়েছিল। কোন যুক্ত প্রমানের ধার ধারেনি।
সুতরাং যারা নিজের ভাবাবেগের গোলাম হয়ে যায়, তাদের ব্যাপারে নবী রসূলদের কিছুই করার থাকে না।
সুতরাং যারা নিজের ভাবাবেগের গোলাম হয়ে যায়, তাদের ব্যাপারে নবী রসূলদের কিছুই করার থাকে না।
'তুমি কি সেই ব্যাক্তির ব্যাপারটা ভেবে দেখেছ, যে নিজের ভাবাবেগকে নিজের ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? তুমি কি তার কোন দায়দায়িত্ব নিতে পার?'
এটি একটি চমৎকার জিজ্ঞাসা। এ জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে একটা বিশেষ মানসিক অবস্থার সুগভীর অভিব্যাক্তি ঘটেছে। কোন মানুষ যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা যাবতীয় রীতিনীতি, আইন-কানুন ও যাবতীয় যুক্তি প্রমানকে অগ্রাহ্য করে নিরেট নিজের ভাবাবেগ ও কামনা-বাসনার দাসত্ব করতে থাকে এবং নিজের খেয়াল খুশিকে প্রভুর আসনে বসায় তখনকার অবস্থাটাই এখানে ফুটে উঠেছে। এই শ্রেনীটির সামনে যুক্তি, প্রমাণ, তত্ত্ব বা তথ্যের কোন গুরুত্ব ও মূল্য নেই। এবং এসব তাকে হেদায়েতের পথে আনতে সাহায্য করে না। আর একারনে রসূল (সাঃ) এর পক্ষে তাদের বা তার দায়দায়িত্ব গ্রহণও অসম্ভব।
কামনা-লালসার এ সকল গোলামদের নিন্দায় আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা বিবেক বিবেচনা বর্জিত পশুর সমান বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারপর আরো একধাপ এগিয়ে তাদেরকে পশুর চেয়েও অধম ও বিপদগামী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বিচার বিবেচনা ও সত্যোপলোব্ধি, সেই সত্যোপলোব্ধির ভিত্তিতে স্বাধীন ভাবে সীদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সত্য-সঠিক যুক্তি প্রমাণের আলোকে যাবতীয় কাজ করা মানুষকে পশু থেকে পৃথক ও সতন্ত্র প্রকৃত-মানুষ রূপে চিহ্নিত করে। আর এ সকল গুনাবলী বঞ্চিত মানুষ পশুর চেয়েও অধম। কেননা পশু আল্লাহ প্রদত্ত সকল ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের যা যা করণীয় তা যথাযথ ভাবে পালন করে এবং উপকৃত হয়। অথচ মানুষ আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতা ও যোগ্যতাকে কাজে না লাগিয়ে বা ভুল পথে নিজের ক্ষমতা ও যোগ্যতাকে বিনিয়োগ করে নিজেকে মহাক্ষতির দিকে পরিচালিত করে এবং এ বিষয়েও থাকে বেখবর।
(নিজস্ব মতামত বিবর্জিত ও প্রখ্যাত তাফসীর গ্রন্থের সংকলনে)
ইমেইলের মাধ্যমে পোষ্ট নিয়মিত পেতে সাবস্ক্রাইব করুনঃ